asd

ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস জেনে নিন

 ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস জেনে নিন

ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস জেনে নিন
ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস জেনে নিন



ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস জেনে নিন ফুটবলের যত রেকর্ড ফুটবলের উৎপত্তি অংশগ্রহণকারী দল বিশ্বকাপ : পেছন ফিরে দেখা  যে ছয়টি দেশে স্বাগতিক হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এগুলো বিষয় নিয়ে এখানে সমস্ত আলোচনা করা হয়েছে আপনারা সবাই জেনে নিন


 ফুটবল খেলার আদি ইতিহাস 

আর কিছু দিন পর অনুষ্ঠিত হতে চলছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮ ।এই নিয়ে মাতামাতির শেষ নাই।পতাকা বানাও, সাপোর্ট কর, খেলা দেখ আরও কত কি।সারা বিশ্বেই চলে এই উম্মাদনা।কিন্তু আমারা যারা ফুটবলকে ভালবাসি, মনে ধারন করি তারা অনেকেই জানেন না এই খেলার আদি উৎপত্তি কোথায় বা প্রাচীন যুগে ফুটবল কারা খেলত বা আদও কেউ খেলত কিনা বা এই ফুটবল প্রাচীন থেকেই এমন ছিল কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।


তাই বিশ্বকাপকে সামনে ভক্তদের ফুটবল সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি আরও একটু বিস্তৃত করতে নিয়ে এলাম ফুটবল সম্পর্কে কিছু প্রাচীন এবং অজানা তথ্য। আশাকরি ফুটবল প্রেমিদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে একটু হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ধারনা করা যায় ফুটবল খেলা প্রথম শুরু করেছিল গ্রিক এবং রোমান সম্প্রদায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ সালের দিকে। প্রাচীন গ্রিক এবং রোমানরা বল দিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলা খেলত, তার মধ্যে কিছু কিছু খেলা পা ব্যবহার করে খেলত। রোমান খেলা Harpastum এসেছে গ্রিক খেলা Episkyros থেকে যা গ্রিক নাট্যকার Antiphanes (388–311 BC) এবং পরে ক্রিস্টিয়ান দার্শনিক Clement of Alexandria (c.150-c.215 AD) তাদের বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করেছেন।এই খেলাটা রাগবি ফুটবল খেলার মত ছিল।


রোমান রাজনীতিবিদ Cicero (106–43 BC) বর্ণনা করেছেন ঐ খেলার সময় একজন মানুষ নাপিতের দোকানে সেভ হওয়ার সময় বলের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন।ঐ বল গুলো বাতাস দ্বারা পূর্ণ থাকত অনেকটা বেলুনের মত।


ফিফার তথ্য অনুযায়ী প্রতিযোগিতামূলক খেলা cuju ই হল ফুটবল খেলার সর্বপ্রথম রুপ যার বৈজ্ঞানিক প্রমান আছে।যদিও ফিফা প্রাচীন গ্রিক খেলা Episkyros কে ফুটবল খেলার সর্বপ্রথম রুপ হিসাবে আগে স্বীকৃতি দিয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে মিলিটারিরা অনুশীলন হিসাবে এটা খেলত।ঐতিহাসিক চাইনিজ মিলিটারি গ্রন্থ Zhan Guo Ce যা প্রণীত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে ১ম শতাব্দীর মধ্যে যা তে ফুটবল কথাটি খুঁজে পাওয়া যায়।


ইহাতে মিলিটারিদের একটা অনুশীলনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যা cuju নামে পরিচিত(cuju মানে kick ball) আর ইহা খেলার জন্য একটা চামড়ার বল প্রয়োজন ছিল যাকে পা দিয়ে লাথি মারা হত এবং সিল্কের কাপর দিয়ে ছোট হোল তৈরি করা থাকত মাটি থেকে ৯ মিটার উপরে বাশের সাথে।চীনের হ্যান সাম্রাজ্যের সময় (206 BC–220 AD), cuju খেলার নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠিত হয়।


পরবর্তীতে এই খেলার বিভিন্ন রুপ জাপানে এবং কোরিয়াতে বিস্তার লাভ করে, জাপানে এই খেলা kemari এবং কোরিয়াতে chuk-guk নামে পরিচিত।পরে আরেক ধরনের গোলপোস্ট বানানো হয় যা মাঠের মাঝখানে বসানো থাকত।অশোকা সাম্রাজ্যের সময় জাপানে kemari খেলা বিকাশ লাভ করে।kemari খেলার নিয়ম ছিল কয়েক জন মানুষ একটা বৃত্তাকার মাঠের ভিতর বল লাথি দিয়ে খেলবে তবে তারা চেষ্টা করত বল যেন মাটিতে ড্রপ না পড়ে বা যেন শূনে ভেসে থাকে।


তবে বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে বল খেলা বিভিন্ন দেশে মানুষরা খেলত।যেমন ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ অনুসন্ধানকারী John Davis গ্রিনল্যান্ডের Inuit দের সাথে ফুটবল খেলেছিল। ১৬১০ সালে আমেরিকানদের খেলা লিপিবদ্ধ করেছিলেন William Strachey নামের একজন ঔপনিবেশিক।তবে অস্ট্রেলিয়ায় লাথি মেরে বল খেলা শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান উপজাতিরা যা বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গ্রন্থে প্রমান পাওয়া যায়।


নিউজিল্যান্ডে Māori রা প্রথম বল খেলা শুরু করে যার নাম ছিল Ki-o-rahi এবং এই খেলার নিয়ম ছিল একটা বৃত্তাকার মাঠকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগে একটা করে দল থাকত এবং প্রত্যেক দলে ৭ জন করে খেলোয়াড় থাকত এবং মাঠের মাঝখানে একটা বৃত্তাকার সীমানা থাকত।দুই ভাবে এই খেলার পয়েন্ট নির্ধারিত হত তা হল একদন আরেক দলের সীমানা পার করে দিতে পারলে এবং মাঝের বৃত্তটা স্পর্শ করতে পারলে বল দিয়ে।



ইউরোপে তথা ইংল্যান্ডে বল খেলা শুরু হয়েছিল ৯ম শতাব্দীতে যা Historia Brittonum বইতে উল্লেখ পাওয়া যায়।ইংল্যান্ডে প্রথম দিকে যে বল খেলা হত তার নাম ছিল "mob football" এবং যা খেলা হত মূলত প্রতিবেশী শহরগুলোর মধ্যে এবং ইহা খেলা হত বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে। এই খেলায় দুই দলে অগণিত খেলোয়াড় থাকত এবং এরা একটা বলকে গায়ের জোরে ধাক্কা ধাক্কি করে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যেতে পারলে পয়েন্ট হত।


আয়ারল্যান্ডে ১৩০৮ সালে ফুটবল খেলা হয়েছিল যা John McCrocan নামের একজন দর্শক খেলাটা দেখেছিল যা তার বইতে উল্লেখ পাওয়া যায়। ষোড়শ শতাব্দীতে ইতালির Florence শহরে যে বল খেলা হত তার নাম ছিল "calcio storico" এবং পরবর্তীতে এই calcio storico ই হল আধুনিক ফুটবলের প্রাথমিক রুপ। এই খেলায় সর্বচ্চ ২৭ জন খেলোয়াড় থাকত এবং প্রত্যেক দলে বিভিন্ন সংখ্যার খেলোয়াড় থাকত যেমন কোন দলে ১৫ জন আবার কোন দলে ২০ জন এবং গোলরক্ষক থাকত ৫ জন।


কিন্তু এই নিয়ম বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে তাই পরবর্তীতে ১৮৭০ সালে আইন করা হয় যে প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকতে হবে এবং এর মধ্য থেকে একজন গোলরক্ষক থাকবে একটি দলে।তাই ১৮৭০ সাল থেকেই আধুনিক ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়।অনেক গবেষণা করে দেখা যায় যে ১০+১০=২০ জন খেলোয়াড়ই যথেষ্ট পুরো মাঠটা কভার করতে।তাই এই ১১+১১=২২ জনের নিয়ম করা হয়।


১৯২৮ সালে সর্বপ্রথম আর্সেনালের পরিচালক পর্ষদ সহজে চেনার জন্য খেলোয়াড়দের জার্সিতে নাম্বা্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন স্বাগতিক দলের জার্সি নাম্বার থাকত ১-১১ পর্যন্ত এবং সফরকারী দলের নাম্বার থাকত ১২-২২ পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৪০ সালে সিদ্ধান্ত হয় যে একই নাম্বার বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রাও নিতে পারবে কিন্তু নাম্বার ঐ ১-২২ পর্যন্ত থাকতে হবে। ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম জার্সিতে খেলোয়াড়ের নাম লেখা হয় এবং যেকোন নাম্বার খেলোয়াড় নিতে পারবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।তারপর থেকেই মুলত ফুটবল বাধা মুক্ত হয়।


ফুটবল শুরুতে 


 

1. ফুটবলে প্রথম বুট ব্যবহার করা হয়েছিল ১৫২৬ সালে।

2. নারীরা প্রথম ফুটবল খেলেছিল ১৫৮০ সালে।

3. প্রথম ফুটবলে গোলের ব্যবহার শুরু হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে।

4. নথিভুক্ত প্রথম ফুটবল ক্লাবের নাম Foot-Ball Club (১৮২৪-৪১) যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে।

5. প্রথমদিকে ফুটবল তৈরি করা হত পশুদের মুত্রথলি দিয়ে বিশেষত শুকুরের মুত্রথলি দিয়ে।

6. সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭০ সালের ৫ই মার্চ ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে।যার ফলাফল ছিল ০-০।

7. সর্বপ্রথম ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭২ সালে ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে।যারও ফলাফল ছিল ০-০।

8. ১৮৭৫ সালে সর্বপ্রথম ক্রসবারের আবির্ভাব হয়।

9. ১৮৭৭ সালে সর্বপ্রথম ফুটবল খেলার দৈর্ঘ্য ৯০ মিনিট নির্ধারণ করা হয়।

10. ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম গোলপোস্টে জাল ব্যবহার করা হয়।

11. ১৮৯১ সালে সর্বপ্রথম পেলান্টি কিকের আবির্ভাব হয়।

12. ১৯০৪ সালের ২১শে মে FIFA প্রতিষ্ঠিত হয়।

13. প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৩ই জুলাই ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে।

14. প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে উরুগুয়ে।

15. ফ্রান্সের Lucien Laurent বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন মেক্সিকোর বিপক্ষে।



ফুটবলের যত রেকর্ড



ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয় খেলার একটি। ৯০ মিনিটের এই খেলায় খেলোয়াড় এবং দর্শকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর খেলা মানেই রেকর্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। একজন খেলোয়াড়ের রেকর্ড আরেক খেলোয়াড় ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আসুন রেকর্ড গড়বে, সৃষ্টি করবে নতুন এক ইতিহাস।

জেনে নিই ফুটবল বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রেকর্ড সম্বন্ধেঃ


১। বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক (৫ বার) অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় এন্তনিয়ো কারবাজাল (মেক্সিকো), লোথার মাথায়ুস (জার্মানি), জিয়ানলুইজি বুফন (ইটালি)।

২। সর্বোচ্চ (২৯টি) ম্যাচ খেলেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।

৩। ১৬ টি গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরোস্লাভ ক্লোসা (জার্মানি)।

৪। সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল (৫ বার)।

৫। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহনকারী দল ব্রাজিল (২০ বার)।

৬। দল হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে জার্মানি (১০৬ টি)।

৭। দল হিসেবে সর্বোচ্চ কার্ড পেয়েছে আর্জেন্টিনা (১২০ টি)।

৮। মাত্র ১৫ বছর ৪ মাস ৪ দিন বয়সে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন জস ভ্যান ইনজেলজেম (বেলজিয়াম)।

৯। সর্বজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন ফারীদ মন্দ্রাগন (কলম্বিয়া), যার বয়স ছিল ৪৩ বছর ১৩ দিন।

১০। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ টি গোল করেছেন অলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া)।

১১। সর্বোচ্চ ৬ টি কার্ড পেয়েছেন জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স), রাফায়েল মারকুয়েজ (মেক্সিকো), কাফু (ব্রাজিল)।

১২। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম শীর্ষ গোলদাতার জন্য “গোল্ডেন বুট পুরস্কার” প্রদান করা হয়।

১৩। ১৯৯৪ সাল থেকে শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষকের জন্যে “গোল্ডেন গ্লোবস পুরস্কার” প্রদান করা হয়।

১৪। দ্রুততম হ্যাট্রিক করেছেন হাঙ্গেরীর লাসলো কিস (৬৯’,৭২’,৭৬’)।

১৫। ৩ বার বিশ্বকাপ জয়ী খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষে রয়েছেন পেলে (ব্রাজিল)।

১৬। সর্বোচ্চ ৩ টি ফাইনাল খেলেছেন কাফু (ব্রাজিল)।

১৭। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভিন্ন দুই দেশের হয়ে খেলেছেন লুইস মন্টি; ১৯৩০ (আর্জেন্টিনা) এবং ১৯৩৪ (ইটালি)।

১৮। খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জয়ী মারিয়ো জরগে লোবো জাগাল্লো (ব্রাজিল)।

১৯। সর্বপ্রথম লাল কার্ড পেয়েছেন প্লাসিদো গালিন্দো (পেরু)।

২০। “ব্যাটল অফ নুরেমবার্গ” নামে পরিচিত নেদারল্যান্ড বনাম পর্তুগাল(২০০৬)-এর খেলায় এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৬ টি হলুদ কার্ড এবং ৪ টি লাল কার্ড দেখানো হয়েছে।

২১। দ্বিতীয়বারের মত কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী করেছেন ইটালির ভিক্টোরিয়ো পোজ্জো (১৯৩৪,১৯৩৮)।

২২। সর্বকনিষ্ঠ ক্যাপ্টেন হিসেবে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন আমেরিকার টনি মেউলা (২১ বছর ৩ মাস ২০ দিন)।

২৩। ভিন্ন দুই দেশের হয়ে বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৩ টি গোল করেছেন রবার্ট প্রসিনেকি; যুগোস্লোভিয়া (১৯৯০), ক্রোয়েশিয়া (১৯৯৮, ২০০২)।

২৪। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আত্নঘাতি গোল হয়েছে।

২৫। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৭ টি গোল করেছে হাঙ্গেরী (১৯৫৪)।

২৬। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে দর্শকের উপস্থিতি সংখ্যা ছিল ৩৫,৮৭,৫৩৮ জন এবং প্রতি খেলায় ৬৮ হাজার ৯৯১ জন উপস্থিত ছিলেন।

২৭। এক ম্যাচে উপস্থিতি দর্শকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১,৭৩,৮৫০ জন (১৯৫০, মারাকানা স্টেডিয়াম) এবং সর্বনিম্ন ২০০০ জন (১৯৩০, এস্টাদিও সেন্টেনারিও)।

ফুটবলের উৎপত্তি



১৯০৪ সালে ফিফা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঠিক পরেই ফিফা অলিম্পিকের আদল থেকে ভিন্ন একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সুইজারল্যান্ডে, ১৯০৬ সালে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের বয়স তখন অনেক কম এবং হয়ত একারণেই ফিফা এই প্রতিযোগিতাকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়েছে স্যার থমাস লিপটন ১৯০৯ সালে তুরিনে স্যার থমাস লিপটন ট্রফি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।

যদিও এটি দেশভিত্তিক প্রতিযোগিতা ছিল না, তবে প্রতিটি ক্লাব ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এজন্য এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে প্রথম বিশ্বকাপ বলেন। এতে ইতালি, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা পেশাদার দল অংশ নেয়।

১৯১৪ সালে , ফিফা অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ফুটবলকে "অপেশাদার বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ" হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় এবং এই প্রতিযোগিতা পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এর ফলে ১৯২০ সালের গ্রীষ্ম অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম আন্তমহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় মিশর ( প্রথম খেলায় নকড আউট হয়) ও তেরটি ইউরোপীয়ান দল। এতে স্বর্ণ জিতে বেলজিয়াম উরুগুয়ে ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ লাভ করে। ১৯২৮ সালে অলিম্পিকের বাইরে আলাদাভাবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৩০ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পা দেয়া দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে (১৯২৪ সাল থেকে ফিফা পেশাদার খেলা শুরু করে) ফিফা তাদের ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে।

১৯৩২ সালের লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্ম অলিম্পিকে ফুটবলকে না রাখার পরিকল্পনা করা হয় কারণ যুক্তরাষ্ট্রে তখন ফুটবল (সকার) জনপ্রিয় ছিল না। ফুটবলের পরিবর্তে ওখানে আমেরিকান ফুটবল (রাগবি ফুটবল) জনপ্রিয় ছিল। ফিফা এবং আইওসির মাঝে অপেশাদার খেলার মর্যাদা নিয়ে মতবিরোধও দেখা দেয়। ফলে ফুটবল অলিম্পিক থেকে বাদ পড়ে যায় হয়।

১৯২৮ সালের ২৬ মে আমস্টার্ডাম সভায় তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে অলিম্পিক থেকে আলাদা স্বতন্ত্র প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেন। ইতালি, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও উরুগুয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।উরুগুয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব লাভ করে।

এভাবে ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথম বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হয়। নির্বাচিত বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থাকে এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রন জানানো হয়। কিন্তু উরুগুয়েতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অর্থ ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সফরে আসতে হবে। এজন্য কোন ইউরোপীয় দেশ প্রতিযোগিতা শুরুর দুইমাস আগেও দল পাঠাতে সম্মত হয়নি ।

রিমে শেষ পর্যন্ত বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া, ও যুগোস্লাভিয়া থেকে দল আনাতে সক্ষম হন। মোট ১৩টি দেশ এতে অংশ নেয়। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সাতটি, ইউরোপ থেকে দু’টি ও উত্তর আমেরিকা থেকে দু’টি।


অংশগ্রহণকারী দল 

প্রথম বিশ্বকাপই হল একমাত্র বিশ্বকাপ যেখানে কোন বাছাইপর্ব ছিল না। ফিফার সহযোগী সকল দেশকেই অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানানো হয়েছিল। ১৯৩০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমন্ত্রণ গ্রহণের শেষ দিন ধার্য করা হয়। 


আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল ভ্রমণের কারনে খুব কম ইউরোপীয় দলই প্রতিযোগিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। উরুগুয়ের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (এফএ সেসময় ফিফার সদস্য ছিলনা) অংশগ্রহণের আবেদন জানিয়েছিল।

১৯২৯ সালের ১৮ নভেম্বর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কমিটি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়; প্রতিযোগিতা শুরুর দুইমাস আগে পর্যন্ত ইউরোপের কোন দেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়নি। 


1. বেলজিয়াম,

2. ফ্রান্স,

3. রোমানিয়া ও

4. যুগোস্লাভিয়া।


 ১৯৩০ সালের ২১ জুন ফ্রান্স দলকে Villefranche-sur-Mer থেকে তুলে নেয়া হয় এবং বেলজিয়াম দলকে বার্সেলোনা থেকে জাহাজে ওঠানো হয়।

একই জাহাজে জুলে রিমে ট্রফিসহ তিনজন ইউরোপীয় রেফারিকে নেয়া হয়: বেলজীয় জাঁ ল্যাঙ্গেনাস ও হেলরি ক্রিস্টোফ এবং প্যারিসবাসী থমাস ব্যালওয়ে, যিনি সম্ভবত ছিলেন একজন ইংরেজ। ১৯৩০ সালের ২৯ জুন রিউ দি জানেইরু থেকে ব্রাজিল দলকে নৌকাতে ওঠানো হয় এবং তারা ১৯৩০ সালের ৪ জুলাই তারিখে উরুগুয়েতে পৌছায়।রিওতে বলওয়ে খবর পেয়েছিলেন যে ফ্রান্সে তার স্ত্রী মারা গেছেন।

মার্সেই থেকে যুগোস্লাভিয়া দল বাস্পীয় জাহাজ ফ্লোরিডাতে করে উরুগুয়েতে পৌছায়।তাদের সাথে অলিম্পিকের জায়ান্ট কিলার মিশর দলের সাথে আসার কথা থাকলেও তারা জাহাজ ধরতে পারেনি।

১৯২৮ সালের অলিম্পিকের ফাইনালের মত এই বিশ্বকাপের ফাইনালেও ওঠে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে। ১৯৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আগে তৃতীয় স্থানের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ বিশ্বকাপে কোন তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কোন কোন সূত্র, বিশেষ করে ১৯৮৪ সালের একটি ফিফা বুলেটিন অনুযায়ী একটি ম্যাচ হয়েছিল যাতে যুগোশ্লাভিয়া ৩-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে।তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য কখনো যাচাই করা হয়নি।

এস্তাদিও সেন্তেনারিওতে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় জুলাই ৩০ তারিখে। খেলা শুরুর ৬ ঘণ্টা আগে আট টার সময় স্টেডিয়াম খুলে দেয়া হয়। দুপুরের আগেই স্টেডিয়াম পূর্ণ হয়ে যায়।প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ৯৩,০০০ দর্শক স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন।খেলা শুরুর পূর্বেই কার বল দিয়ে খেলা হবে সে বিষয়ে ঝগড়া বেধে যায়। শেষ পর্যন্ত ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় প্রথম অর্ধে আর্জেন্টিনার বল ও দ্বিতীয় অর্ধে উরুগুয়ের বল দিয়ে খেলা হবে। প্রথম অর্ধে উরুগুয়ে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে ম্যাচ জেতে এবং প্রথম বিশ্বকাপ 
বিজয়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

জুলে রিমে "বিশ্বকাপ ট্রফি" প্রদান করেন। পরে এই ট্রফির নাম রাখা হয় "জুলে রিমে ট্রফি"। পরের দিন উরুগুয়েতে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়।কিন্তু আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস উরুগুয়ের দূতাবাসে উম্মত্ত জনতা পাথর নিক্ষেপ করে।

সেই ফাইনালের কেবল একজন খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো ভ্যারালো (যিনি আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন) ২০০৭ সাল পর্যন্ত জীবিত আছেন। প্রতিযোগিতার পরে ফ্রান্স, যুগোশ্লাভিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকায় প্রীতি ম্যাচে অংশ নেয়। ব্রাজিল ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৯৩০ সালের ১ আগস্ট, যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ১০ আগস্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৭ আগস্ট অংশ নেয়। আর্জেন্টিনা ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে অংশ নেয়।


বিশ্বকাপ : পেছন ফিরে দেখা 

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। গত শতকের তৃতীয় দশকেই জনপ্রিয় বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরটি প্রথমবারের মতো বসে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়েতে। প্রতি ৪ বছর অন্তর এই আসর নিয়মিত বসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কখনও আমেরিকায়, কখনও ইউরোপে, কখনও আফ্রিকায়, কখনও এশিয়ায়। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ এই ২টি বিশ্বকাপের আসর বসেনি।

প্রত্যেক আসরেই কে হবে চ্যাম্পিয়ন- এই নিয়ে ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে চলে মাতম। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক উরুগুয়ে। এবং দ্বিতীয় বিশ্বকাপও ১৯৩৪ সালেও এই একই ঘটনা ঘটিয়ে বসে স্বাগতিক দেশ ইতালি। এর পরই ঘটনা চলতে থাকে ভিন্ন খাতে অর্থাৎ নিজেদের মাঠে নিজেদের দেশের সাপোর্ট বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বের কিন্তু এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১৭টি বিশ্বকাপের মধ্যে মাত্র ৬ বার কাপ জিতেছে স্বাগতিকরা।আর বাকি ১১ বারই কিন্তু অন্য দেশ কাপ নিয়ে গেছে স্বাগতিকদের দেশ থেকে।

যে ছয়টি দেশে স্বাগতিক হিসাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা হলোঃ


1. ১৯৩০-এ উরুগুয়ে,

2. ১৯৩৪-এ ইতালি,

3. ১৯৬৬-তে ইংল্যান্ড,

4. ১৯৭৪-এ পশ্চিম জার্মানি,

5. ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা

6. এবং ১৯৯৮-তে ফ্রান্স।


OTG কি বিস্তারিত জানুন OTG এর কাজ কি   ক্লিক করুন

Post a Comment

0 Comments