ক্রিকেট খেলার ইতিহাস আপনারা সবাই এখনি জেনে নিন
ক্রিকেট খেলার ইতিহাস আপনারা সবাই এখনি জেনে নিন
ক্রিকিটের প্রাচীনকাল,আধুনিক ক্রিকিটের পথচলা,টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম, অ্যাশেজ,বিশ্বকাপ ক্রিকেট।ক্রিকিটের এই বিষয়গুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে আপনারা সবাই পড়ে দেখবেন।আশা করি এগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ক্রিকিটের প্রাচীনকাল
ফুটবলের মতো ক্রিকেটের জনক কে তা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মত । তবে বেশিরভাগ মতই বলছে ক্রিকেটের জন্ম হয় ইংল্যান্ডে । কিন্তু বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত থেকে জানা যায় ক্রিকেটের প্রচলনটা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাব অঞ্চলে । ৭ম শতাব্দীতে এই এলাকায় ব্যাট এবং বল নামে এক ধরনের খেলা হতো । ১০ম শতাব্দীর আগে প্রাচীন ভারতীয় মরুভূমিতে বসবাসকারী ‘নরম্যাডিক জিপসি’রা তুরস্ক হয়ে ইউরোপে যায় এবং সেখানে দিয়ে তারা তাদের মধ্যে প্রচলিত এই খেলাটি খেলে থাকে । তাদের দেখাদেখিই ইউরোপীয়দের মধ্যে খেলাটির প্রচলন হয় । বল নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খেলা প্রচলিত ছিল । তবে বলের সাথে ব্যাটের উদ্ভব হয়েছে দক্ষিণ ভারতে । সেখানে ব্যাটকে ‘ডান্ডা’ বলা হতো ।
১১৮৩ খ্রীস্টাব্দে জোসেফ অব এক্সেটার নামক লেখকের লেখা থেকে জানা যায় - ১০৬৬ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যান্ড বিজয়ের পর নরম্যানরা চিত্ত-বিনোদনের জন্য ব্যাট-বলের খেলাটি গ্রহণ করে । তাদের হাত ধরেই গোড়াপত্তন হয় ক্রিঘ (creagh)/ ক্রিকে (cricke) নামক খেলার । সে সময় শুধুমাত্র সপ্তাহের রবিবার এই খেলাটি খেলা হতো । খেলাটির ধরন ছিল এরকম – একটি বল একজন ব্যাটসম্যানের দিকে ছুড়ে মারা হতো । ব্যাটসম্যানের ঠিক পেছনেই আজকের স্ট্যাম্পের মতো এক ধরনের কাঠামো থাকতো । ব্যাটসম্যান সেই কাঠামোকে বলের আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার হাতে থাকা কাঠের তক্তা দিয়ে বলটিকে বাড়ি মারতো । ব্যাটসম্যানের বাড়ি মারা বলটিকে ধরার জন্য তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকজন ফিল্ডারও থাকতো ।
১৪০০ খ্রিস্টাব্দে এসে শুরু হয়ে যায় রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা । তাই ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রিকেটের উপর নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা । কেননা ক্রিকেট খেলার কারণে যুদ্ধ করার মতো প্রয়োজনীয় সৈনিক পাওয়া যাচ্ছিল না । সুতরাং রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করেন । যদি কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্রিকেট খেলতো, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হতো।
১৫০০ খ্রিস্টাব্দের পর ইউরোপে রাজ্য জয়ের প্রতিযোগিতা প্রায় বন্ধ হয় । সেই শতকের শেষের দিকে ইতালিয় রেনেসার প্রভাবে ইউরোপের শিল্প-সংস্কৃতির খোলস পাল্টে যেতে শুরু করে । যার ছিটেফোটা খেলাধুলার গায়েও লাগে । ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগে যেই খেলাটির নাম ছিল ক্রিঘ (creagh) বা ক্রিকে (cricke), সেটিই ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এসে পরিচিতি লাভ করে ক্রিকেট (crickett or crickette) নামে । আস্তে আস্তে ক্রিকেট খেলার কারণে যে শাস্তির বিধান করা হয়েছিল সেটি উঠে গেছে ধারণা করলেও এক ধরনের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাকে সাথে নিয়েই আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ক্রিকেট । বিশেষত ধর্মযাজকরা এই খেলাটির ঘোর আপত্তি করতে থাকে । তাদের মতে, ক্রিকেট হলো অলস, অকর্মন্য আর জুয়াড়িদের খেলা । ধর্মযাজকরা এর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিল । কিন্তু কোনো বাঁধাই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ক্রিকেটের চলার পথে ।
আধুনিক ক্রিকিটের পথচলা
কাউন্টি ম্যাচের মাধ্যমে আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় । ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যকার ম্যাচটির মাধ্যমে । তবে ১৭৪৪ সালের আগে ক্রিকেট পুরোপুরি আধুনিক হয়ে উঠেনি । কেননা সে সময়ও নিয়ম-কানুন মেনে ক্রিকেট খেলা হতো না । ১৭৪৪ সালে আধুনিক ক্রিকেটের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন করা হয় এবং সেই নিয়ম মোতাবেক ক্রিকেট খেলা শুরু হয় । অষ্টাদশ শতকে আন্তঃকাউন্টি ক্রিকেট খেলা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে । ১৭৪০-এর দশকে কেন্ট দল সেরা কাউন্টি দল হিসেবে বিবেচিত ছিল । এছাড়াও, তখনকার জনপ্রিয় দল হ্যাম্বলডন ক্লাব যা বর্তমানে হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট দল সর্বদলীয় ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে খেলতো । হ্যাম্পশায়ার, কেন্ট, মিডলসেক্স, সারে ও সাসেক্স কাউন্টি ক্রিকেটে সর্বাপেক্ষা সফলতম দলের মর্যাদা পায় । কিন্তু শহর ও কাউন্টির মধ্যকার দলের মাঝখানে স্থানীয় পর্যায়ের বেশকিছু শক্তিশালী ক্লাব দলও সম্পূর্ণ কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করতো । তন্মধ্যে লন্ডন ক্রিকেট ক্লাব প্রায়শঃই কাউন্টি দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতো ও দলটি নিজেই কাউন্টি ক্লাবের মর্যাদা লাভ করতো । এছাড়াও, ১৭৪০-এর দশকে স্লিনডন ক্রিকেট ক্লাব বেশ কয়েক বছর সাসেক্স, ডার্টফোর্ড ক্রিকেট ক্লাব কেন্টের ও হ্যাম্বলডন ক্লাব সাসেক্স কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করতো । ১৮৮৮ সালে সকল খেলার সময়সূচী তিনদিনব্যাপী করা হয় । সমগ্র দিনে ছয় ঘন্টাসহ বিরতি রাখা হয় । প্রায়শঃই প্রথম দুই দিন এক ঘন্টা বৃদ্ধি করে দীর্ঘসময় ও শেষদিনে সংক্ষিপ্ত সময় ধার্য্য করা হয় । ফলে কোন কারণে দলগুলোর অন্যত্র নির্ধারিত খেলায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু সময় ভ্রমণে ব্যয় করতে পারতো । ১৯১৯ মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে দুই দিনের খেলায় দীর্ঘসময়ব্যাপী রাখা হয় । ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কিছু খেলা চারদিন পর্যন্ত রাখা হয় । ১৯৯৩ থেকে অদ্যাবধি সকল খেলাই চারদিনের রাখা হয়েছে ।
টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম
১৮৭৭ সালে এসে টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম হয় । ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । ১৮৭৭ সালের ১৫ ই মার্চ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় । ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে । ১৮৮২-৮৩ সাল থেকে শুরু হয় মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ লড়াই । এরপর থেকে অন্যান্য দেশ টেস্ট ক্রিকেটে একে একে পদার্পণ করে । দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৮৮-৮৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯২৮, নিউজিল্যান্ড ১৯২৯-৩০, ভারত ১৯৩২, পাকিস্তান ১৯৫২-৫৩, শ্রীলঙ্কা ১৯৮১-৮২, জিম্বাবুয়ে ১৯৯২ এবং বাংলাদেশ ২০০০ সাল । শুরুর দিকে টেস্ট ম্যাচগুলো অনেক দিন ধরে চলত । কেননা এখনকার মতো নির্দিষ্ট কোনো দিনের হিসাব ছিল না । তখন ম্যাচ দেখার জন্য প্রচুর দর্শক হতো । এই সময়েই টিকিট কেটে খেলা দেখার প্রচলন শুরু হয় । কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণে অনির্দিষ্ট দিন ধরে চলতে থাকা এই খেলা প্রায়ই বন্ধ থাকতো । এই নিয়ে আয়োজক ও দর্শকদের মধ্যে লাগতে থাকে গন্ডগোল । একই সাথে কমতে থাকে ক্রিকেটের দর্শক । এই কারনে পরবর্তীকাল তা পাঁচদিনে নিয়ে আসা হয় ।
অ্যাশেজ
১৮৮২ সালের ২৯ আগস্ট লন্ডনে প্রথম জন্ম হয় এই ‘অ্যাশেজ’ শব্দটির । ইংরেজি শব্দ অ্যাশেজের বাংলা অর্থ হল ‘ছাই’। একশ বছরের বেশি সময় আগ থেকে এখনও অ্যাশেজ নামে টেস্ট সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বর্তমানে ‘টেস্ট’ নামে পরিচিত বড় ফরম্যাটে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । যা ছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্ট । ১৫ মার্চ শুরু হওয়া টেস্টটি শেষ হয় ১৯ মার্চ । মাঝে একদিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ বিশ্রাম নেয় তারা । আর ইতিহাসের প্রথম টেস্টটি ৪৫ রানে জিতে বড় ফরম্যাটে যাত্রা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া । ১৮৮১ সালের মাঝমাঝি সময় চার ম্যাচের সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড । আর তাতেই যেন ব্যাপকভাবে প্রসার পেয়ে যায় টেস্ট ক্রিকেট । নিজেদের মাঠে চার ম্যাচের ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া । এরপর ১৮৮২ সালে টেস্ট নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । ওভালে ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট তিন দিনের এক ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । কিন্তু অবাক করার মত বিষয় ঘটে ঐ ম্যাচে । দুই দিনে নিষ্পত্তি হয়ে যায় ম্যাচটি । তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টেস্টটি মাত্র ৭ রানে জিতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া । পক্ষান্তরে আগুনে পুড়ে যাবার মত অবস্থা ঘটে ইংল্যান্ডের । দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের হারে স্বাগতিকদের ক্রিকেট মৃত্যুর সকল বাস্তবতা দেখে ফেলেছিল সেদেশের ক্রিকেটবোদ্ধা ও গণমাধ্যমগুলো । সে সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য স্পোর্টিং টাইমসে বেশ বড়সড়ভাবে একটি রিপোর্টে প্রকাশ করে, ‘ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেল । এখন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের অস্তিত্ব বলতে শুধু ‘ছাই’ আছে । আর সেই ‘ছাই’ সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করতে করতে দেশে ফিরে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ।’ তখন থেকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের নামকরণ হয় ‘অ্যাশেজ’। কারণ অ্যাশেজের বাংলা অর্থই হল ‘ছাই’। যেই টেস্ট থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ‘মৃত্যু’ এবং ‘অ্যাশেজ’ নামকরণ করা হয়েছিল, তার পরের সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে । ফলে তিন ম্যাচের ঐ সিরিজটি ‘অ্যাশেজ’ নামে পরিচিত লাভ করে । আর ১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ লড়াই শুরু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া । আর ঐ সিরিজ থেকে নিজেদের ক্রিকেটের নতুন দিগন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ড । ২-১ ব্যবধানে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে টেস্ট সিরিজটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ইংলিশরা । তাই বলা যায়, ১৮৮২ সালের শেষ দিকে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ ।
ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম
ষাটের দশকের শুরুতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে রাগনেল হার্ভের উদ্যোগে রথম্যানস কো. ৪০ ওভারের একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। খেলা হতো রোববারে। তাতে খেলতেন কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে চলতি ও প্রাক্তন তারকা খেলোয়াড়দের সম্মিলনে গড়া ইন্টারন্যাশনাল কার্ভেলিয়ার্স। এই ম্যাচগুলো লাইভ প্রোগ্রাম দেখাত বিবিসির ২ নম্বর চ্যানেল। যেসব দর্শক তিন দিনের ফলাফলবিহীন অসমাপ্ত ম্যাচ না দেখার জন্য মাঠ ত্যাগ করেছিলেন, তারাই সকাল-বিকালের ম্যাচে জয়-পরাজয় প্রত্যক্ষ করার জন্য মাঠে আসতে শুরু করল।
পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে জিলেট কাপ নামে ৬০ ওভারের এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ইংল্যান্ডে । এই টুর্নামেন্টই ১৯৮১ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি নামে পরিচিতি লাভ করেন । এর আগে ১৯৬৯ সাল থেকে ৪০ ওভারের একটি টুর্নামেন্ট এর প্রচলন ছিল। টুর্নামেন্টটির নাম ছিল ‘জনপ্লেয়ার স্পেশাল লিগ’।
ইংল্যান্ডের দেখাদেখিই টেস্ট খেলুড়ে অন্যান্য দেশগুলোতেও সীমিত ওভারের খেলার প্রচলন শুরু হয় । ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের শুরু হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয়ী হয়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে ‘ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে । পরে ১৯৫৬ সালে ‘ইম্পেরিয়াল’ কথাটি পরিবর্তন করে ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দটি যোগ করে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল’ রাখা হয়, সংক্ষেপে আইসিসি । বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশ একসাথে নিয়ে নতুন এক টুর্নামেন্টের চিন্তা করে । সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৭ জুন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে (৭ জুন - ২১ জুন) ইংল্যান্ডে । প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট এর অফিসিয়াল নাম ছিল প্রুডেনশিয়াল কাপ (Prudential Cup)। ওই টুর্নামেন্টে মোট ৮টি দেশ অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৬ টি টেস্ট প্লেয়িং দেশ (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং দুইটি নন টেস্ট প্লেয়িং দেশ (তৎকালীন সময় পর্যন্ত) শ্রীলঙ্কা ও পুর্ব আফ্রিকা। তখন ৬০ ওভার করে (বর্তমানে ৫০ ওভার) করে খেলা হত।
প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ । ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন ছিল ক্লাইভ লয়েড । প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ক্লাইভ লয়েডের ৮৫ বলে ১০২ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ২৯১ রান (৮ উইকেটে) । জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৫৮.৪ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রান করতে সক্ষম হয়েছিল ।
টুয়েন্টি ২০ ক্রিকেট
ক্রিকেটপ্রেমীদের মন রাঙাতে, সময় বাঁচাতে উদ্ভাবন হল আরও ছোট ফরম্যাট । টুয়েন্টি ২০ ক্রিকেট । পেশাদার ফরম্যাটে যার আত্মপ্রকাশ ২০০৩-এ । যার প্রবর্তন করে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড । ২০০৪-এর ১৫ জুলাই লর্ডসে ২৬,৫০০ দর্শকের উপস্থিতিতে প্রথম টি ২০ ম্যাচের আয়োজন করা হয় । দুই প্রতিপক্ষ ছিল মিডলসেক্স ও সারে । ইংল্যান্ডের হোভে ২০০৪-এর ৫ আগস্ট প্রথম প্রমীলা আন্তর্জাতিক টি ২০ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মেয়েরা হারিয়ে দেন ইংল্যান্ডের মেয়েদের । পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টি ২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ওয়াকায় । ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্স ও ভিক্টোরিয়ান বুশরেঞ্জার্সের সেই ম্যাচ দেখতে মাঠে জড়ো হয়েছিল ২০,৭০০ দর্শক । ছেলেদের প্রথম টি ২০ ম্যাচে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয় অকল্যান্ডে । দিনটি ছিল ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ । অস্ট্রেলিয়া সেই ম্যাচে জয়ী হয় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে । আর প্রথম টি ২০ বিশ্বকাপের আসর বসে ২০০৭-এ । ২৪ সেপ্টেম্বর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত । ক্ষুদে বার্তায় যতটা সম্ভব সংক্ষেপে মনের কথা লেখাটাই এই আমলের ফ্যাশন । টি ২০ ক্রিকেটও হাল আমলের চালু ফ্যাশন । চার-ছক্কার ঢেউয়ে সব টেনশন দূরে সরিয়ে রেখে ক্ষণিকের আনন্দে নিমগ্ন হওয়ার সুযোগ করে দেয় টি ২০ । এই ফরম্যাট শুধু একটা খেলা নয়, বিনোদনও ।
0 Comments