asd

শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস

 শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস

শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস
শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস




শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস 
শীতকালে ত্বকের যত্ন ত্বকের,উজ্জ্বলতা ধরে রাখুন,ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে,শীতের প্রসাধনী,শীতের রাতে ত্বকের বিশেষ যত্ন,পুরো শীতকাল যে ভাবে থাকবেন,শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন,কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বিশেষ টিপস।এগুলো সব বিষয় নিয়ে এখানে লেখা হয়েছে আপনারা এগুলো পড়ে খুব সহজে শীতকালে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন টিপস পারবেন।


শীতকালে ত্বকের যত্ন


প্রশ্ন : 

শীতকালে ত্বকের পরিচর্যা কী ?

উত্তর : 

আসলে শীত যখন আসে, আমাদের ত্বককে পরিবেশের দুটো জিনিসের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। একটি হচ্ছে তাপমাত্রা, আরেকটি স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। শীতে এ দুটোই কমে যায়। আমাদের ত্বকে একটি নিজস্ব কর্মপদ্ধতি আছে। এটি দিয়ে আমরা চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারি। কিন্তু শীতে আমাদের ত্বকের জন্য একটি বিশেষ যত্ন দরকার। আর এ জন্য আমাদের দরকার একটি ত্বকের উপযোগী শীতের যত্ন।

প্রশ্ন : 

এই পরিচর্যার মধ্যে কোন কোন বিষয় পড়ে?

উত্তর :

ত্বকের পরিচর্যায় প্রথমে আসে ত্বকের ধরন। আমরা সাধারণত ধরন বলতে বুঝি শুষ্ক, তৈলাক্ত বা স্পর্শকাতর ত্বক। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের ডার্মাটোলজিস্টরা ত্বকের একটি ধরনের কথা বলে থাকি। চুলের রং, চোখের আইরিশ ও ত্বকের টোনের ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। এভাবে আমরা ছয়টি ধরন করি। টাইপ ১, ২, ৩ হলো একটু বেশি সাদা। টাইপ ৪, ৫ হলো বাদামি ত্বক। আর ৬ হলো একটু কালো ত্বক। সাধারণত এটা আফ্রিকানদের হয়ে থাকে।

টাইপ ১, ২ ও ৩-এর ক্ষেত্রে পোড়ে বেশি, তবে ট্যান কম হয়। আর আমরা যারা বাঙালি, তাদের ট্যান বেশি হয়, পোড়ে কম। শীত এলে আমাদের প্রথম ভয় হলো ত্বক মরামরা হবে, একটু কালো হয়ে যাবে। আমরা তাই অনেক বেশি ব্লিচিং উপাদান বা লাইটেনিং উপাদান ব্যবহার করতে থাকি। এতে শীতের শেষে দেখা যায়, হয়তো অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজারের কারণে ত্বকে ব্রণ বা র‍্যাশ হচ্ছে। অথবা পোস্ট ইনফ্লামেটরি হাইপার পিগমেন্টেশন হয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : 

তাহলে কী করা উচিত?


উত্তর : 

যেকোনো ত্বকের ধরনের জন্য অবশ্যই দরকার এক বছর মেয়াদি এসপিএফ রুটিন। এসপিএফ রুটিন বলতে আমরা সানস্ক্রিনই বলব না, দিনে আমরা যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি, বাইরে যাওয়ার জন্য আমরা যেই পণ্যগুলো ব্যবহার করি, আমরা বিবি ক্রিম বা বিভিন্ন ভ্যানিশিং ক্রিম ব্যবহার করি, সেগুলোও পড়ে। এগুলোর সবকিছুতে একটু হালকা এসপিএফ থাকতে হবে। শীতকাল দেখে যে আমি এসপিএফযুক্ত কিছু ব্যবহার করব না, এটি একদম ভুল। কারণ, শীতেও আলট্রাভায়োলেট রে বলিরেখা ও পোড়া দুটোই করে।

প্রশ্ন : 

এসপিএফ বিষয়টি সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন?

উত্তর : 

আমরা এসপিএফ ও সানস্ক্রিনের সঙ্গে বেশি পরিচিত। আমাদের যে বাদামি ত্বক, ৪ ও ৫ নম্বর ধরনের, সেখানে এসপিএফ ৩০ পর্যন্ত পণ্যগুলো ব্যবহার করা বেশি ভালো হবে।

প্রশ্ন : 

আপনি কি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া খুব উপকারী?

উত্তর : 

আমরা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এমন একটি পণ্য ব্যবহার করব, সেটি সানক্রিন হোক বা ময়েশ্চারাইজার পণ্য, সেটি আমাদের বাজে পরিবেশ থেকে প্রতিরোধ করে, সঙ্গে বয়সের দাগগুলোও ধীরগতির করে। তাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব। আর বয়স যাদের কম, তারা আলফা হাইড্রো অক্সিড এসিডযুক্ত যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারে। আর সানস্ক্রিন ব্যবহারে ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের খুব ক্ষতি হবে না।

প্রশ্ন :

কসমেটিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?

উত্তর :

শীতকালে একটি বাড়তি শুষ্কতা ত্বকে চলে আসে। যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের ত্বক তো আরো শুষ্ক হয়ে থাকে। অনেকে একটি অভিযোগ করে, আমি বাইরে যাচ্ছি, এই পণ্য ব্যবহার করছি। ভালোভাবে পণ্যটি ত্বকে বসছে না, ভেসে আসছে। সে ক্ষেত্রে আমি যে ক্লিনজার ব্যবহার করব, ত্বকের উপযোগী হতে হবে। আর ক্লিনজার যদি জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ হয়, দেখা যাবে একটি বাড়তি ময়েশ্চারাইজার আমার ত্বকে চলে আসছে। আর এর পরও আমরা যখন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব, দুটো জিনিসের ওপর খেয়াল করতে হবে।

প্রথম হলো, আমাদের ত্বকে লিপিড নামে একটি পদার্থ থাকে। সিমেন্ট যেমন ইটের ভাঁজে ভাঁজে দেওয়া হয়, সে রকমই লিপিড আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। শীতকাল এলে লিপিডটা নষ্ট হতে থাকে। সে জন্য আমরা গ্লাইকোলিক এসিডযুক্ত কোনো জিনিস যদি ব্যবহার করি, এরপরও আমরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কথা বলেছি। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি আমরা রাতের বেলা যদি মুখে দিই, সকালবেলা ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে, ক্রিমযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে, ময়েশ্চারাইজার দিয়ে এর পর যে পণ্যগুলো দরকার, সেগুলো ব্যবহার করলে ত্বকটা ভালো দেখাবে। 

ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখুন 

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকেও কিছু পরিবর্তন আসে। গরমে ত্বকে যে রকম সমস্যা, শীতের সমস্যা অনেকটা ভিন্ন। আবার ত্বকের ধরন যখন শুষ্ক তখন সব ঋতুতেই প্রধান সমস্যা থাকে শুষ্কতা। সারা বছরই যাদের ত্বক শুষ্ক থাকে শীতের সময় তাদের সমস্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তবে এ ধরনের ত্বকে একটু যত্ন নিলেই ফ্রেশ থাকার পাশাপাশি সুন্দরও থাকে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড’য়ের কর্ণধার অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ।

শুষ্ক ত্বকে তেল গ্রন্থি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। ফলে ত্বক অল্পতেই শুষ্ক হয়ে যায়। এ ধরনের ত্বকে বলিরেখা তাড়াতাড়ি পড়ে, শীতের সময় শুষ্কতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার জন্য এক ধরনের অস্বস্তি হয়। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে যত্ন করে প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে দুতিন দিন নিয়ম করে স্ক্রার্বিং করতে হবে। আমন্ড অয়েল এ ধরনের ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ তেল শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।

শুষ্ক ত্বকে ক্রিম সমৃদ্ধ ক্লেজার ব্যবহার করা উচিত। আর টোনিংয়ের ক্ষেত্রে ‘ফ্লাওয়ার’ সমৃদ্ধ টোনার শুষ্ক ত্বকের উপযোগী। কখনও অ্যালকোহল সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করবেন না। কারণ এ ধরনের ত্বকে অ্যালকোহল আরও বেশি শুষ্ক করে দেয়। ঘরোয়া উপায়ে যদি পরিষ্কার করতে চান তবে বেসন ভালো ক্লেনজার। সাবানের পরিবর্তে বেসন দিয়ে দিনে দুতিনবার পরিষ্কার করুন।

এ সময় শুষ্কতার থেকে রক্ষা পেতে বেসনের সঙ্গে কাঁচাদুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে এবং দেহের অনাবৃত অংশে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক পরিষ্কার উজ্জ্বল ও মোলায়েম হবে। স্ক্রার্বিংয়ের সময় এই মিশ্রণের সঙ্গে এক চা-চামচ চিনি মিলিয়ে নিন।

এরপর পুরো মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর উষ্ণ পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে এর সঙ্গে কয়েকটা গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে মিশিয়ে নিন। তৈলাক্ত হলেও শীতের সময় ত্বক একটু শুষ্ক অনূভুত হয়। এক্ষেত্রেও ত্বকের জন্য এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে।

তবে চিনির পরিবর্তে তৈলাক্ত ত্বকে মধু ভালো কাজ করবে। বেসনের ক্ষেত্রে মুসুর ডালের বেসন তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী। মধু ত্বকে বাড়তি পুষ্টি যোগান দেয়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ। ত্বক পরিষ্কার করার একদুই মিনিটের মধ্যে টোনিং করতে হবে।

তুলায় টোনার নিয়ে ত্বকে একবার বুলিয়ে নিন। টোনার ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বকের রোমকূপগুলো সঙ্কুচিত হয়। যা ত্বক সতেজ রাখে। এরপর ময়শ্চারাইজিং করুন। পাকাপেঁপে ও মধু মিলিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন।

পাকাপেঁপে ‘ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার’ হিসেবে ভীষণ ভালো কাজ করে এবং নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনই রাত্রে শোবার আগে ত্বক পরিস্কার করে ভালো ব্র্যান্ডের একটা নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন। এটা রুক্ষতা দূর করে ত্বক আদ্র করে তুলবে।

ত্বকের যত্ন নিবেন কিভাবে

এখন শীত মৌসুম। শুষ্ক হয়ে উঠেছে আবহাওয়া। একই সাথে শুষ্ক হয়ে উঠছে মানুষের ত্বক। শুষ্কতার পরিমাণ বেড়ে গেলে তা ত্বকে সৃষ্টি করে নানা সমস্যা। সৌন্দর্যেরও হানি ঘটে ব্যাপক। কে না চায় চেহারাটা সুন্দর থাকুক? সবাই প্রশংসা করুক তার রূপের? সুন্দর চেহারা বা রূপের জন্য স্বভাবতই প্রথমে পরিচর্যা নিতে হয় ত্বকের। আর শীতে তো কথাই নেই। ত্বকের প্রধান শত্রু শীত। আরো বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে এ সময়। তবে শীতে ত্বকের শুষ্কতা মারাত্মক রূপ নেয়ার আগে কিছুটা যত্ন নিলেই ত্বককে কোমল, সজীব করা সম্ভব। কিন্তু কীভাবে?

নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন-

গোসলের সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করবেন না কিংবা গরম পানি ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে তোলে। গোসলের পরে ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হাতে, পায়ে, মুখে এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হবে না। ত্বকে ভেজাভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে।

শীতে গোসলের সময় সাবান কম ব্যবহার করাই ভালো। কারণ সাবান ত্বকে শুষ্কতা সৃষ্টি করে। সুতরাং গোসলে কিংবা হাত-মুখ ধুতে সাবান যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করবেন। এ সময় সাধারণত গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করাই উত্তম।

শীতে ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে গ্লিসারিন কিংবা অলিভ অয়েল নিয়মিত মাখতে পারেন। গ্লিসারিন হলো সবচেয়ে ভালোময়েশ্চারাইজার। একভাগ গ্লিসারিনের সাথে দু'ভাগ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। গ্লিসারিনের আঠা-আঠা ভাবটা দূর করার জন্য গ্লিসারিন মাখার পর একটা ভিজে তোয়ালে বা কাপড় হালকা করে ত্বকে চেপে ধরলে আঠাভাব চলে যাবে।

রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ক্রিম মেখে বের হতে হবে। শীতের রোদ মিষ্টি আমেজ সৃষ্টি করলেও ত্বকের জন্য তা ক্ষতিকর। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের সমূহ ক্ষতি করে। ত্বকের ক্যান্সার ঘটা বিচিত্র কিছু নয়। তাই ত্বককে রক্ষা করতে হলে সানপ্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম মেখে বের হওয়াই মঙ্গলজনক। বিভিন্ন মাত্রার এসপিএফসমৃদ্ধ ক্রিম বা লোশন রয়েছে। তবে গবেষকদের মতে এসপিএফ-১৫ সমৃদ্ধ ক্রিম ত্বকের জন্য নিরাপদ।

শরীরের ত্বকের শুষ্কতার সাথে পাল্লা দিয়ে ঠোঁটের শুষ্কতা এ সময়ে মারাত্মকভাবে েবড়ে যায়। অনেকে এ সময়ে জিভ দিয়ে বারবার ঠোঁট ভেজাতে থাকেন, যা ঠোঁটের কোমল ত্বকের জন্য আরো ক্ষতি ডেকে আনে। সবচেয়ে ভালো হয়- ঠোঁটে বারবার ভেসলিন মাখলে। যদি ভেসিলিন শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তাহলে গাঢ় করে ভেসলিন মাখতে হবে। ঠোঁটের ওপরিভাগের পাতলা শুষ্ক ত্বক কখনো টেনে তুলে আনার চেষ্টা করবেন না, তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

শীতে শরীরের ত্বক ফেটে যায়। সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন চর্মরোগের। এ অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে পুরো শরীরে অলিভ অয়েল মাখলে ত্বকের শুষ্কতা কেটে যাবে এবং ত্বক সজীব থাকবে। ত্বক ফেটে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং অলিভ অয়েল ব্যবহারে তেমন উন্নতি না ঘটলে চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।

বিভিন্ন ফলমূল এবং সবজি ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে। গাজর, শিম, লেবু, টমেটো, পালংশাক প্রভৃতি সবজি খেলে ত্বক যৌবনদীপ্ত থাকে। অনেকে ত্বক সুন্দর রাখার জন্য ত্বকে বিভিন্ন সবজি ও ফলের রস মেখে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ত্বকে এ ধরনের সবজি বা ফলের রস মাখলে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজ হয় না, উপরন্ত ত্বকে লেবুর রস মেখে বাইরে বেরোলে ত্বকের রঙ আরো কালো হয়। ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবজি এবং ফলমূল খেতে হবে। সেই সাথে পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণ পানি। আর হ্যাঁ, ধূমপান একেবারেই করবেন না। গবেষকরা বলেন, ধূমপান ত্বককে বৃদ্ধ করে ফেলে।


শীতের প্রসাধনী

সবাই হয়ত লক্ষ্য করেছেন গুটি গুটি পায়ে শীতের আমেজ চলে এসেছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া শীতের আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। শীতকালে আমাদের ত্বক সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। এর কারণ হলো শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে বিধায় ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ার থেকে আর্দ্র ভাব কমে যায়। শীতকালে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করে নিজেদের ত্বককে নরম রাখতে চান। তাই আজ ত্বকের উপযোগী ফেসিয়াল, বডি এবং পায়ের যত্নের জন্য কিছু ক্রিম লোশনের কথা জানাবো। এর ভেতর কিছু দেশে পাবেন আবার কিছু হয়ত দেশের বাইরে থেকে আনাতে হবে।

শুষ্ক ত্বকঃ

শীতে শুষ্ক ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে আরও যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই এ ধরনের ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। সে কারণে শীতে তো বটেই বরং শীত আসার আগে থেকেই শীতের রুক্ষ আবহাওয়া মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে হবে।

Pond’s Dry Skin Cream

যুগ যুগ ধরে এই ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ফর্মুলার ক্রিম আমরা ব্যবহার করে আসছি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পন্ডস কোম্পানিও তাদের ফর্মুলা গুলোতে বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে। এই ক্রিমি ফর্মুলা ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বক কে করে তোলে চটপট প্রাণবন্ত। ডারমাটোলজিক্যালি টেস্টেড এই ক্রিমটি সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরাও নিশ্চিন্তে ত্বকে বুলিয়ে নিতে পারেন। খুব সহজেই লোকাল মার্কেটে ক্রিমটি পেয়ে যাবেন।

Nurix Royal

আগেই বলে নিচ্ছি Lancome কোম্পানির এই ক্রিমটির দাম একটু বেশি। কিন্ত এর কার্যক্ষমতা এই দামের দাবীদারও বটে। আপনার যদি ফাইন লাইন থেকে থাকে তাহলে ক্রিমটি ব্যবহারের কয়েক দিনের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। ক্রিমটির সফট টেক্সচারের মত আপনার রুক্ষ শুষ্ক ত্বকও হয়ে উঠবে নরম তুলতুলে। অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে ত্বকে যে টানটান ভাব আসে তা থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন নিমিষে। দিনরাত পুরো ২৪ ঘণ্টা আপনার ত্বক কে দেবে সুরক্ষা। এতে বিদ্যমান রাইস ব্রান অয়েল, কর্ণ অয়েল, এপ্রিকট কার্নেল অয়েল, মিনারেল অয়েল আপনার ত্বকে এই শীতেও এনে দেবে বাড়তি চমক। ৪৩ গ্রামের একটি ক্রিমের দাম পড়বে ৪৮০০ টাকা। Lancome এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট থেকে অর্ডার করতে পারেন।

Cetaphil Moisturizing Lotion

নন-গ্লেসি ফর্মুলাতে তৈরি এই লোশন সব ত্বকের জন্য উপকারী হলেও শীতে শুষ্ক হাত পায়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে। এতে আছে এমোলিয়েণ্ট এবং হিউম্যাকট্যাণ্ট যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। amazon.com থেকে অর্ডার করতে পারেন অথবা বসুন্ধরা সিটি বা প্রিয়তে খোঁজ নিতে পারেন। ২৩৭ মিলির দাম ৫৫০ টাকা।

                                               তৈলাক্ত ত্বক


তৈলাক্ত ত্বক বলে শীতে কোন ময়েশ্চারাইজার লাগবে না এই ধারণা কিন্তু একদম ভুল। শীতকালেও আপনার ব্যবহারের জন্য আছে স্পেশাল কিছু ফর্মুলা।

Lakme Fruit Moisture Honey & Avocado Winter Perfect Day Cream

ল্যাকমের নতুন এই হার্বাল প্রোডাক্টটির সাথে আমরা অনেকেই হয়ত এখনও পরিচিত হতে পারিনি। শীতে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের ব্যবহারের জন্য ল্যাকমে কোম্পানির এতো আয়োজন। এতে তারা SPF ৯ সংযুক্ত করেছেন। মধু এবং এভোক্যাডোর এক্সট্রাক্ট মিশ্রিত এই ক্রিমটি আপনার তৈলাক্ত ত্বকে শীতকালে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা যোগাবে। এর জন্য গুনতে হবে হাজার টাকার মত।

Nivea Happy Time Body Lotion

আপনি যদি স্নিগ্ধ গন্ধযুক্ত কোন লোশনের খোঁজে থাকেন তবে এই লোশনটি আপনি নির্বাচন করতে পারেন। কমলার গন্ধযুক্ত এই লোশন দিনভর আপনাকে রাখবে চনমনে। ব্যামবু এক্সট্রাক্ট এবং মিল্ক প্রোটিন সমৃদ্ধ এই লোশনটির বদৌলতে শীতে দিন রাত পুরো ২৪ ঘণ্টা আমার তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের শুষ্ক বডি এবং হাত, পা থাকবে মসৃণ। লোশনটি এমনই ফর্মুলাতে তৈরি যেন নর্মাল, ড্রাই, অয়েলি সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে। আলমাসে বা অন্য কোন দোকানেও পাবেন ২৫০-৩০০ টাকার বিনিময়ে। তবে কোয়ালিটি এবং দোকান অনুযায়ী দাম ভ্যারি করে।

The Body Shop Seaweed Mattifying Day Cream 

এটি একটি জেল টেক্সচারের ময়েশ্চারাইজার। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন বাইরের দিক থেকে ত্বককে শুষ্ক রাখবে কিন্তু আভ্যন্তরীণ দিক থেকে আপনার ত্বক থাকবে আর্দ্র। ত্বক খুব দ্রুত এই ক্রিম শোষণ করে নেয়। এটি অতিরিক্ত সেবাম কন্ট্রোল করে স্কিনকে রাখে সতেজ, পরিষ্কার এবং নরম। সেই সঙ্গে ম্যাট শাইন ফ্রি লুক দেয়। ৪৯ গ্রামের একটি কৌটার দাম প্রায় ২৪০০ টাকা।
                                                    

                                                       মিশ্র ত্বক


মিশ্র ত্বক ২ ধরনের হয়ে থাকে- অয়েলি কম্বিনেশন এবং ড্রাই কম্বিনেশন। আমি এই ২ ধরনের ত্বকের উপযোগী কিছু ক্রিমের নাম জানিয়ে দিচ্ছি।

Clinique Dramatically Different Moisturizing Gel

আপনার যদি অয়েলি কম্বিনেশন টাইপের স্কিন হয়ে থাকে অর্থাৎ ত্বকে তৈলাক্ত ভাগ বেশি থাকে তাহলে এই ক্রিমটি আপনার জন্য একদম পারফেক্ট। আপনার যদি অয়েলিটি জোন থেকে থাকে তবে আপনি বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন। এই অয়েল ফ্রি ফর্মুলা ত্বককে করে মসৃণ, নরম। দাম ২৪০০ টাকা, যা আলমাস,স্টারডাস্টে অনায়াসে পেয়ে যাবেন।

Olay Quench Ultra Moisture Lotion

মিশ্র ত্বকের বডির জন্য তেমন কোন বডি লোশন বা ক্রিম নেই। তাই সব স্কিন টাইপের জন্য ফরমুলেটেড কোন একটি লোশন আপনি বেছে নিতে পারেন। Olay Quench Ultra Moisture লোশনটি তার মধ্যে একটি। এই সুগন্ধিবিহীন সিই বাটার, ভিটামিন ই এবং বি ৩ সমৃদ্ধ লোশনটি পুরো ২৪ ঘণ্টা ধরে যেমন শুষ্ক ত্বক কে সুরক্ষা দিবে তেমনি আপনার কম্বিনেশন বডিকে ময়েশ্চারাইজ করবে। ভালো ফলাফল পেতে গোসলের পর পরই শরীরে লাগাবেন। বসুন্ধরা সিটিতে বা অন্যান্য মার্কেট গুলোতে পেয়ে যাবেন ৫৫০-৬০০ টাকার মধ্যে।

Seaweed Day Cream

The Body Shop কোম্পানির জেল টেক্সচারের এই ক্রিমটি ড্রাই কম্বিনেশন টাইপ ত্বকের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী। এক্সসেস সেবাম ব্যালেন্স করে ম্যাট লুক দেয়। ১৫ মিলির দাম ৫০০ টাকা।

                                                   স্বাভাবিক ত্বক

যেকোনো ক্রিম বা লোশন আপনি আনায়াশে ব্যবহার করতে পারেন। শীতকালে ত্বকের যত্নে কিন্তু আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্রয়োজন।

আরেকটি প্রয়োজনীয় ছোট টিপস দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধা গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। এই শীতেও সবার ত্বক হবে লাবণ্যময়, স্বাস্থ্যজ্জ্বল। 


শীতের রাতে ত্বকের বিশেষ যত্ন

প্রকৃতির দরজায় কড়া নেড়েছে আরেকটি শীত। আর শীত কাল মানেই প্রকৃতির শুষ্ক হয়ে ওঠা। প্রকৃতির এই শুষ্কতার পাশাপাশি এসময়ে চেহারাও হয়ে ওঠে শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল। আর এই শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল চেহারার জন্য এসময়ে দরকার বাড়তি কিছু যত্ন। শীতের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরন করলেই ত্বক এবং চুল উজ্জ্বল, মসৃন রাখা যায়। আসুন জেনে নেয়া যাক শীতের রাতে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে।

ত্বক পরিষ্কার করা

শীত কাল এসেছে বলে কি ত্বক পরিষ্কার করতে হবে না? ঠান্ডা পানির ভয়ে ত্বক পরিষ্কার না করলে ত্বকে ব্রণের উপদ্রব দেখা দেয়। তাই শীতের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। ত্বক পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল দিয়ে মুখ ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন। এরপর হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখটা মুছে ফেলুন। সবশেষে ভালো কোনও ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

ময়শ্চারাইজ করা

শীতে যেহেতু ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় তাই এসময়ে দরকার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করা। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধোয়ার পরে অবশ্যই ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে নেয়া জরুরী। ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কোনও ময়শ্চারাইজার বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন অলিভ ওয়েল। ময়েশ্চারাইজার পুরো মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ত্বক হয়ে উঠবে প্রানবন্ত।

ফেস প্যাক

অন্য সময়ের থেকে শীতের ফেস প্যাক হবে একটু আলাদা। কারণ এসময়ে দরকার ত্বকের বাড়তি যত্ন। শীতে ত্বকের যত্নের জন্য জেনে নিন দুটি ফেস প্যাক বানানোর পদ্ধতি।

• এক টুকরা পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে নরম করে এর সঙ্গে খানিকটা পাকা কলা চটকে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর চন্দন গুঁড়া মিশিয়ে ওই মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিন।নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক ত্বক মোলায়েম হয়ে ওঠে।

• পাকা কলা, পাকা পেপে ও ময়দা এক সঙ্গে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর এই পেস্টটি ১০/১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃন।

হট ওয়েল ম্যাসেজ

শীত কালে অনেকেরই চুল রুক্ষ হয়ে যায় এং আগা ফেটে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শীতের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল গরম করে ম্যাসাজ করেন নিন। চুলের আগায় ও গোড়ায় ভালো করে হালকা গরম তেল ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে যান। সারা রাত চুলে তেলের উপস্থিতিতে চুলের রুক্ষ ভাব কেটে যাবে এবং চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে উজ্জ্বল।


পুরো শীতকাল যে ভাবে থাকবেন


হাঁটিহাঁটি পা পা করে আসছে শীত। হিম হিম শীতল এই ছোঁয়া শরীরের জন্য আরামদায়ক হলেও ত্বকের জন্য নয়। শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে নানা রকম ত্বকের সমস্যা। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য শীত যেন এক দুঃস্বপ্ন। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা অতিরিক্ত তেল থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও মুখ ধোয়ার পর পরই ত্বকে দেখা যায় শুষ্ক টান টান ভাব। অতিরিক্ত শুষ্কতা ত্বকে খুব দ্রুত বলিরেখা তৈরি করে ও শুষ্ক মৃত কোষ ত্বক কে কালো দেখায়। তাই সব ধরনের ত্বকেই শীতে প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন। আসুন জেনে নিই কীভাবে নেবেন শীতে ত্বকের পরিপূর্ণ যত্ন।

ক্লিঞ্জিং

শীতে ত্বক পরিষ্কার করতে বেছে নিন মাইল্ড ও কম ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ, যা ত্বক কে অতিরিক্ত শুষ্ক করবে না ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মুখে সাবান ব্যবহার করবেন না একদমই। সারা শরীর পরিষ্কার করতেও সাবানের বদলে বেছে নিন শাওয়ার জেল। দিনে ২-৩ বারের বেশি মুখ ধোবেন না। এতে ত্বক প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে।

স্ক্রাবিং 

শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বক থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে ত্বক হয়ে পরে শুষ্ক ও খসখসে। ত্বকে জমে মৃতকোষ। বাড়ে ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস। এসব থেকে বাঁচতে স্ক্রাবিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে ২-৩ দিন স্ক্রাবিং করুন। বাজারে প্রচলিত স্ক্রাব ব্যবহার করতে না চাইলে বাসায় তৈরি করে ফেলতে পারেন স্ক্রাব। ২ চা চামচ চালের গুঁড়োর সাথে ২ চা চামচ টক দই ও মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন।

টোনিং

টোনিং জন্য বেছে নিন অ্যালকোহল ফ্রি টোনার। টোনার ত্বকের PH ব্যালেন্স ঠিক রাখে ও ময়েশ্চারাইজার বা ফাউন্ডেশনকে লোমকূপের মুখ বন্ধ করতে বাঁধা দেয়।

ময়েশ্চারাইজেশন-

শীতে ত্বক সুরক্ষার প্রধান উপায় হলো ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চাইরেশন। শীতের শুষ্কতা ত্বক থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে ত্বক হয়ে পরে শুষ্ক ও রুক্ষ। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে গোসল /মুখ ধোয়ার পর ভেজা ভাব থাকতেই ত্বকে লাগান ক্রিম /লোশন। ওয়াটার বেসড ক্রিম /লোশনের বদলে বেছে নিন অয়েল বেসড ক্রিম/লোশন। রাতে ত্বকের বাড়তি সুরক্ষায় করুন ডিপ কন্ডিশনিং। আপনার পছন্দের যেকোনো তেল যেমন আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েলের সাথে মেশান ভিটামিন ই অয়েল (ভিটামিন ই ক্যাপসূল আকারে ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়)। একসাথে মিলিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন। আমন্ড অয়েল /অলিভ অয়েল ও ভিটামিন ই ত্বক নরম রাখতে ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ফেসপ্যাক-

গরমের দিনে যেসব অয়েল কন্ট্রলিং ফেসপ্যাক ব্যবহার করেছেন, শীতে সেগুলো ব্যবহার করা যাবেনা একদমই। তাহলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ফেটে যাবে। ত্বকে ব্যবহার করুন এমন ফেসপ্যাক যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও ত্বক নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করবে।

শীতে সব ধরনের ত্বকের উপযোগী কিছু ফেসপ্যাকঃ

পাকা কলার পেষ্ট+মধু+আমন্ড অয়েল

পাকা পেঁপে+মধু+টক দই

কোকো পাউডার+টক দই+মধু

ঠোঁটের যত্ন-

শরীরের অন্য যেকোনো অংশের চেয়ে ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত পাতলা ও সংবেদনশীল। শীতে ঠোঁট খুব সহজেই আর্দ্রতা হারিয়ে শুকনো খরখরে হয়ে যায়, ফেটেও যায়। ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ঠোঁটে লাগান চ্যাপস্টিক /লিপবাম। Brut’s bee, aquafina, nivea lip therapy, maybelline baby lips, The body shop shea chap stick ভালো মানের চ্যাপস্টিকের মধ্যে অন্যতম। চ্যাপস্টিক বা লিপবাম সাথে রাখুন সবসময়। ভুলেও জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। এতে ঠোঁট আরও শুষ্ক হয়ে ফেটে যাবে। সপ্তাহে ২ দিন ঠোঁটে লাগান বাড়িতে তৈরি লিপস্ক্রাব। এজন্য ১ চা চামচ চিনি, ১/২ চা চামচ লেবুর রস ও ১/২ চা চামচ মধু মিশিয়ে ঠোঁট আলতো ভাবে ঘষুন। মরা চামড়া উঠে গিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার হয়ে যাবে।

হাত ও পায়ের যত্ন-

গোসলের পর ভেজা থাকতেই হাত পায়ে লাগান লোশন বা বডি বাটার। এই শীতে হাত পায়ের ত্বক সুরক্ষায় বডি বাটার খুবই উপকারী। যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক তারা লোশনের সাথে মিশিয়ে নিন আমন্ড অয়েল /অলিভ অয়েল /বেবি অয়েল।

– সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন বডি স্ক্রাব। বাজারে পাওয়া যায় হাত পায়ের যত্নে বিশেষ স্ক্রাবও।

– যাদের শীত এলেই পা ফাটে, তারা সপ্তাহে একদিন বাড়িতেই পেডিকিউর করুন।

– উষ্ণ গরম পানিতে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পিউমিস স্টোন বা বাফার দিয়ে ঘষে মরা চামড়া তুলে ফেলুন। তারপর গোড়ালিতে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। গোড়ালির সুরক্ষায় নানা রকম ফুট ক্রিমও পাওয়া যায়।

– রাতে পায়ে পুরু করে ভ্যাসলিন মেখে মোজা পরে ঘুমান। তাহলে আর পা ফাটবে না।

সানস্ক্রিন-

অনেকেই ভাবেন শীতে বুঝি সানস্ক্রিন লাগানোর প্রয়োজন নেই। এটি একদম ভুল ধারনা। বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। কারণ শীতের রোদে UVA UVB আরও বেশি মাত্রায় থাকে। ব্যবহার করুন broard spectrum ও SPF 30 যুক্ত সানস্ক্রিন।

শীতে মেক-আপ-

শীত হলো মেক-আপ করার আদর্শ সময়। কারণ শীতে মেক-আপ গলে তেল চিটচিটে হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। এই শীতে গাঢ় আর কালারফুল মেক-আপে সাজিয়ে তুলুন নিজেকে। তবে মেক-আপ করার আগে ত্বকে পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না আর গরমে ব্যবহার করা ম্যাট ফাউন্ডেশনের বদলে ব্যবহার করুন অয়েল বেসড ফাউন্ডেশন। লিপস্টিকের বদলে লাগান লিপগ্লস।

এই শীতে যা করবেন-

শীতের শুষ্ক আবহাওয়া শরীর থেকে পানি শুষে নেয়। তাই ভেতর থেকে শরীরকে আর্দ্র রাখা খুব জরুরী। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। খাদ্য তালিকায় যোগ করুন শীতের ফলমূল ও সবজি – টমেটো, গাজর, ফুলকপি, কমলা এগুলো ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

যা করা যাবে না-

ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলী /ভ্যাসলিন না লাগানোই ভালো। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ঠোঁট কালো করে ফেলে। যতই আরাম লাগুক অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল না করাই ভালো। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পরে। করতে চাইলে গরম পানিতে আপনার পছন্দের তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। এই শীতেও থাকুন সজীব ও উজ্জ্বল। উপভোগ করুন শীতকে।

শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন

শীতে ছেলেদের ত্বক হয় অনেক বেশি রুক্ষ; বিশেষ করে গোসলের পর ত্বক হয় খসখসে। এই শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্তি পেতে হলে সঠিকভাবে এর যত্ন নেওয়া চাই। কারণ, ত্বকের যত্ন ঠিকভাবে না নিলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়। এ বিষয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক আফজালুল করিম বলেন, বাজারে ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ও লোশন রয়েছে। কিন্তু যাচাইবাছাই করে ভালো মানের ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। কারণ, প্রসাধনী ভালো মানের না হলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ছেলেদের ত্বকের যত্নে তাঁর পরামর্শ হলো—

খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। অল্প সময় নিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে।

ক্রিম, লোশন, সাবান—সব ধরনের প্রসাধনীই বাড়তি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হতে হবে।

শেভ করার পর ক্রিম লাগানো উচিত। তাহলে ত্বকে ফাটল ধরবে না।

যাঁদের রোদে বেশি থাকা হয়, তাঁরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।

গোসলের পর লোশন লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। সেটি যেন ত্বকে ভালোভাবে মিশে যায়। তারপর বাইরে বেরোতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি ওঠে। এ ছাড়া ধুলাবালুর কারণে ছেলেদের ত্বক পরিষ্কার করতে হয় বারবার। এ প্রসঙ্গে পারসোনা অ্যাডামসের শাখা ব্যবস্থাপক মো. মাসুম বিল্লাহ খান বলেন, ছেলেদের অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ (ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে এমন) ব্যবহার করা উচিত। তাহলে ত্বক ভালো থাকবে। তিনি আরও বলেন, বাজারে ছেলেদের জন্য নানা ব্র্যান্ডের যেসব ক্রিম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

তা নাহলে ক্রিম কাজ করবে না। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে ম্যাসাজ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক ঠান্ডা থাকে এবং ব্রণ ওঠে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। যদি রোদে বেশি থাকা হয়, তাহলে সানস্ক্রিন লাগিয়ে ঘর থেকে বের হওয়াই ভালো। অবসর পেলে ভেষজ কোনো প্যাক লাগানো যেতে পারে। যাঁরা প্যাক লাগাতে চান না, তাঁরা কমলালেবু কিংবা পাকা টমেটো মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। 

এতে ত্বক পরিষ্কার হবে। ত্বকের যত্নের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া যতটা সম্ভব কম রাত জাগা উচিত; সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে প্রতিবেলাতেই শাকসবজি রাখতে হবে। ফল খেতে হবে এবং শুকনো খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। ত্বকের যত্নের জন্য মাসে দুবার ফেসিয়াল করা যেতে পারে।

কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বিশেষ টিপস

শীত আসছে আসছে করে চলেই এল। এ ঋতুতে ত্বকের যত্ন নেয়াটা খুব জরুরী। তাই এই শীতে নারী বিশেষ করে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য কিছু বিশেষ টিপস। শীত শুরুর এ সময়টায় বাতাস থাকে শুষ্ক। হয়তো কারও কারও এখনই শুরু হয়েছে ত্বক ফাটা, মৃত কোষ জমে ত্বকের রংও মলিন হতে শুরু করেছে। অনেকেই শীতের প্রসাধনী যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, কোল্ড ক্রিম, পমেড ব্যবহার শুরু করেছেন। তবে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যাঁদের নানা কাজে সকালে বের হতে হয়, তাঁদের হালকা মেকআপ নিতেই হয়। এ জন্য ত্বক সুন্দর রাখা জরুরি, প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন।

এ সময়টায় ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার শুরু করবেন নিয়মিত, আর তা যেন ঘন ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম হয়। রাতে ঘুমানোর আগে যাঁদের বয়স কম, তাঁরা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। বয়স ত্রিশের কোঠা ছাড়ালে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। হাতে-পায়েও খুব ভালোমতো ময়েশ্চারাইজিং লোশন মেখে ঘুমাবেন। সকালে উঠে ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশ বা কোমল ময়েশ্চারযুক্ত সাবান দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন।

এ সময় নিয়মিত বা এক দিন অন্তর স্ক্রাব করা ভালো। অনেকের ধারণা, নিয়মিত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলে বা স্ক্রাব করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। কিন্তু ত্বক পরিষ্কার করতে ও মৃত কোষ সরিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে এর বিকল্পও নেই। মাঝে মাঝে স্ক্রাবিংয়ের পর দুধের সর ও মধু মেখে একটু পর ধুয়ে ফেলবেন। অথবা গাজরের রস মুখে মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলবেন। ত্বকের পরিবর্তন নিজেই টের পাবেন। এভাবে ত্বক ঠিকমতো ধোয়াও হবে, কালো ছোপও কমবে।

অনেকের ঠোঁট ফাটতে শুরু করেছে। কমলার রস মেখে কিছুক্ষণ রাখতে পারেন। অথবা গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে মাখাতে পারেন। দাগ তো কমবেই, ঠোঁট নরমও থাকবে। ঠোঁট নরম রাখতে কোকো বাটারযুক্ত লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন।

শীতে মেকআপ করতে চাইলে ত্বক কোমল রাখতে হবে। এ সময়টায় রোদ কড়া হয় না বলে অনেকে রোদ থেকে কোনো সুরক্ষা নেন না। কিন্তু রোদ গায়ে না লাগলেও সানবার্ন কিন্তু ঠিকই হয়। তাই সাধারণ ক্রিম না মেখে অবশ্যই সানব্লকযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন। খেয়াল রাখবেন, এতে যেন এসপিএফ অন্তত ১৫ হয়। তারপর স্বাভাবিক নিয়ম মেনে মেকআপ করুন। তবে ঘরে ফিরে অবশ্যই গভীরভাবে মেকআপ তুলতে হবে এবং ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম মাখতে হবে। সবশেষে তানজিনা যোগ করলেন, শীতের ত্বকের আসল যত্ন কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। শীতের সব রকম শাকসবজি ও ফল খাবেন এবং প্রচুর পানি পান করবেন। এইটুকু সতর্ক অভ্যাসই আপনাকে পুরো শীতকালের জন্য সুন্দর করে তুলবে।


Post a Comment

0 Comments